স্বাগত হে মাহে রমযান

মো. আল আমিন
সমস্ত প্রশংসার মালিক একমাত্র আল্লাহ তায়ালাআমরা তার প্রশংসা করি, তার কাছে সাহায্য প্রার্থনা করিতার নিকট ক্ষমা ও মাগফিরাত কামনা করিআমরা আল্লাহ তায়ালার নিকট প্রবৃত্তিজাত অনিষ্ট ও কর্মের কুপ্রভাব হতে আশ্রয় চাইআল্লাহ তায়ালা যাকে হেদায়েত দান করেন, তার কোন ভ্রষ্টকারী নেইআর যাকে তিনি ভ্রষ্ট করেন, তার কোন হেদায়েতকারী নেইআমি সাক্ষ্য দিচ্ছি, আল্লাহ ব্যতীত কোন মাবুদ নেইতিনি এক, ও একক, তার কোন শরীক নেইআরও সাক্ষ্য দিচ্ছি, হযরত মুহাম্মদ (সা.) তার বান্দা ও রাসূলহে আল্লাহ ! সালাত, সালাম ও বরকত অবতীর্ণ করুন তার উপর, তার বংশধর ও সাহাবাদের উপর, এবং কেয়ামত পর্যন্ত যারা তার পথে ধাবিত হবে ও তার আদর্শের অনুসরণ করবে তাদের উপর
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন, 'হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাকোঅবশ্যই মুসলমান না হয়ে মৃত্যুবরণ করো না। (সূরা আল-ইমরান-১০২)
আল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন আরো ইরশাদ করেন, হে মানব সমাজ! তোমরা তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় করো, যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তার থেকে তার সঙ্গীনীকে সৃষ্টি করেছেন; আর বিস্তার করেছেন তাদের দু'জন থেকে অগণিত পুরুষ ও নারীআর আল্লাহকে ভয় করো, যাঁর নামে তোমরা একে অপরের নিকট যাঞ্চা করে থাকো এবং আত্নীয় স্বজনদের ব্যাপারে সতর্কতা অবলম্বন করোনিশ্চয়ই আল্লাহ তোমাদের ব্যাপারে সচেতন রয়েছেন। (সূরা নিসা-১)
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন আরো ইরশাদ করেন, 'হে মুমিনগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সঠিক কথা বলোতিনি তোমাদের আমল আচরণ সংশোধন করবেন এবং তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেনযে কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অনুসরণ করে, সে অবশ্যই মহা সাফল্য অর্জন করবে। (সূরা আহযাব-৭০-৭১)
পবিত্র মাহে রমযান মুসলিম জাতির প্রতি মহান আল্লাহর সীমাহীন অনুকম্পা ও অনুদানের অন্যতমরহমতে আলম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, এ-মাসকে শাহরুন-মুবারাকুন বা বরকতময় মাস বলে অভিহিত করেছেনএ মাসের রয়েছে বিশাল মর্যাদা ও ফযীলতরয়েছে বিশেষ বিশেষ আমলএ মাসকে কেন্দ্র করে মহান আল্লাহ প্রতিটি ঈমানদারের ইহলৌকিক ও পরলৌকিক উন্নতি ও কল্যাণ সাধনের সুযোগ অবধারিত করে দিয়েছেনপ্রতিটি মুসলমান যাতে এ মাসের মহা মূল্যবান প্রতিটি মুহূর্তকে কাজে লাগিয়ে প্রতিশ্রুত প্রতিদান অর্জনে উদ্যোগী হয়, চেষ্টা-শ্রমের সবটুকু নিংড়ে দেয়, সেভাবে উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করা প্রয়োজনএ মাসের সাথে ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ রুকনের সম্পর্ক রয়েছেআর তা হলো সিয়াম বা রোজা পালনহজ্জ যেমন জিলহজ্জ মাসের সাথে সম্পর্কিত হওয়ার কারণে সে মাসের মর্যাদা বৃদ্ধি করেছে তমনিভাবে রোজা রমযান মাসে হওয়ার কারণে এ মাসের মর্যাদা বেড়ে গেছে
আল্লাহু সুবহানাহু তায়ালা ইরশাদ করেন, 'হে মুমিনগণ! তোমাদের উপর রমজানের রোজা ফরয করা দেয়া হয়েছে, যেমনি ফরয করা হয়েছে তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর, যাতে তোমরা মুত্তাকী হতে পারো' (সূরা বাকারাহ-১৮৩)
রমযান মাসের আগমনে মুসলিমগণ আনন্দ প্রকাশ করে থাকেনআনন্দ প্রকাশ করাই স্বাভাবিক স্বতঃস্ফূর্ততাপার্থিব কোনো সম্পদের সাথে আল্লাহর এ অনুগ্রহের তুলনা চলে না, তা হবে এক ধরনের অবাস্তব কল্পনাযখন রমযানের আগমন হতো, তখন রাসূলে কারীম (সা.) অতিশয় আনন্দিত হতেন, তার সাহাবাদের বলতেন তোমাদের দ্বারে বরকতময় মাস রমযান এসেছেএরপর তিনি এ মাসের কিছু ফযীলত বর্ণনা করে বলতেন: আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য সিয়াম পালন ফরয করেছেনএ মাসে আকাশের দরজাসমূহ খুলে দেয়া হয়বন্ধ করে দেয়া হয় জাহান্নামের দরজাগুলোঅভিশপ্ত শয়তানকে বন্দি করা হয়এ মাসে রয়েছে একটি রাত যা হাজার রাতের চেয়ে শ্রেষ্ঠযে ব্যক্তি এর কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো সে মূলত সকল কল্যাণ থেকে বঞ্চিত হলো। (মাসনাদে আহমদ ও নাসায়ী)
আমাদের কর্তব্য হলো আল্লাহর এ অনুগ্রহের মূল্যায়ন করতে চেষ্টা করা, এ মাসের ফযীলত ও তাৎপর্য অনুধাবনে সচেষ্ট হওয়া ও ইবাদত-বন্দেগীসহ সকল কল্যাণকর কাজে নিয়োজিত থাকাএ মাসের যে সকল ফযীলত রয়েছে তা হলো এ মাস কুরআন নাযিলের মাস
আল্লাহ রাব্বুল আলামীন ইরশাদ করেন, 'রমজান মাস, এতে নাযিল হয়েছে আল-কুরআন, যা মানুষের দিশারী এবং স্পষ্ট নিদর্শন ও সত্যাসত্যের পার্থক্যকারী। (সূরা বাকারাহ-১৮৪)
রমযান মাসে সপ্তম আকাশের লাওহে মাহফুজ থেকে দুনিয়ার আকাশে বায়তুল ইজ্জতে পবিত্র আল-কুরআন একবারে নাযিল হয়েছেসেখান হতে আবার রমযান মাসে অল্প অল্প করে নবী কারীম (সা.)-এর প্রতি নাযিল হতে শুরু করেকুরআন নাযিলের দুটি স্তরই রমযান মাসকে ধন্য করেছেশুধু আল-কুরআনই নয় বরং ইবরাহীম (আঃ)-এর সহীফা, তাওরাত, যবুর, ইঞ্জিল সহ সকল ঐশী গ্রন্থ এ মাসে অবতীর্ণ হয়েছে বলে সহী হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। (সহী আল-জামে)
এ মাসে মানুষের হেদায়াত ও আলোকবর্তিকা যেমন নাযিল হয়েছে তেমনি আল্লাহর রহমত হিসেবে এসেছে সিয়ামতাই এ দুই নিয়ামতের শুকরিয়া আদায় করতে বেশি বেশি করে কুরআন তিলাওয়াত ও অধ্যয়ন করা উচিতপ্রতি বছর রমযান মাসে জিবরাইল-(আঃ) রাসূল (সা.)-কে পূর্ণ কুরআন শুনাতেন এবং রাসূল (সা.)-ও তাকে পূর্ণ কুরআন শুনাতেনআর জীবনের শেষ রমযানে আল্লাহর রাসূল দু'বার পূর্ণ কুরআন তিলাওয়াত করেছেন। (সহী মুসলিম)
মুসলিম ভাই-বোনেরা! রমযান মাসে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয় ও জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়শৃঙ্খলাবদ্ধ করা হয় শয়তানদেররাসূল (সা.) বলেছেন, 'যখন রমযান মাসের আগমন ঘটে তখন জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়, জাহান্নামের দরজা বন্ধ করে দেয়া হয় এবং শয়তানদের আবদ্ধ করা হয়' অন্য হাদিসে এসেছে, শয়তানদের শিকল
পড়ানো হয়। (মুসলিম)
তাই শয়তান রমযানের পূর্বে যে সকল স্থানে অবাধে বিচরণ করতো রমযান মাস আসার ফলে সে সকল স্থানে যেতে পারে নাশয়তানের তৎপরতা দুর্বল হয়ে যায়ফলে দেখা যায় ব্যাপকভাবে মানুষ তাওবা, ধর্মপরায়ণতা, ও সৎকর্মের দিকে অগ্রসর হয় ও পাপাচার থেকে দূরে থাকেতারপরও কিছু মানুষ অসৎ ও অন্যায় কাজ-কর্মে তৎপর থাকেকারণ, শয়তানের কু-প্রভাবে তারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়ে পড়েছে
আল্লাহর হাবীব রাসূল (সা.) ইরশাদ করেন, 'যখন রমযানের প্রথম রাত্রি আগমন করে শয়তান এবং অবাধ্য জিনদের শৃঙ্খলিত করা হয়, জাহান্নামের সকল দরজা বন্ধ করে দেয়া হয়; খোলা রাখা হয় না কোন দ্বার, জান্নাতের দরজাগুলো খুলেদেয়া হয়; বন্ধ রাখা হয় না কোনো তোরণএদিকে একজন ঘোষক ঘোষণা করেন- 'হে পুণ্যের অনুগামী, অগ্রসর হওহে মন্দ-পথযাত্রী থেমে যাওআবার অনেক ব্যক্তিকে আল্লাহ তয়ালা জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেনআর এমনটি করা হয় রমযানের প্রতি রাতেই। (তিরমীযী)
রাসূল (সা.) তাই রমযান আসার পূর্ব থেকেই রমযানের ) জন্যে প্রস্তুতি নিতেনশা'বান মাসে অধিকহারে নফল রোজা পালনের মাধ্যমে তিনি রমযানে সিয়াম সাধনার পূর্বানুশীলন করতেনরাসূল (সা.) সাহাবীদেরকে রমযানের শুভাগমনের সুসংবাদ দিতেনতাঁদেরকে শোনাতেন রমযানের ফযীলতের কথাযেনো তারা রমযানে ইবাদত-বন্দেগীতে বেশি করে আত্মনিয়োগ করতে পারেননেকী অর্জনে অতিরিক্ত পরিশ্রম করতে প্রত্যয়ী হনসুতরাং আমাদের কর্তব্য হলো, এ মাস আসার আগেই এর যথার্থ মূল্যায়নের জন্য প্রস্তুতি গ্রহণ করানিরবে এসে নিরবে চলে যাওয়ার পূর্বেই এ মহান অতিথির সমাদর করাএ মাস যেনো আমাদের বিপক্ষে দলীল না হয়ে দাঁড়ায় তার প্রস্তুতি সম্মন্ন করাকারণ মাসটি পেয়েও যে এর উপযুক্ত মূল্য দিল না, বেশি বেশি পুণ্য আহরণ করতে পারল না এবং জান্নাত লাভ ও জাহান্নাম থেকে পরিত্রাণের পরোয়ানা পেল না, সে বড় হতভাগ্যসবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপার হলো এমন ব্যক্তি আল্লাহর ফেরেশতা ও রাসূল (সা.) -এর বদ দু'আর অধিকারীকারণ এমন ব্যক্তির ওপর জিবরাইল (আঃ) লা'নত করেছেন আর রাসূল (সা.) তাঁর সঙ্গেও আমীন বলেছেন! রমযানকে স্বাগত জানানোর সর্বোত্তম উপায়, রমযানকে সকল গুনাহ থেকে বিশেষ তাওবার সাথে গ্রহণ করাকারণ এটাতো তাওবারই মৌসুমতাই আসুন আমরা এ মহান মাসকে বরণ করে নেয়ার এবং এ মাসের দিন-রাত্রিগুলো এমন আমালের মধ্য দিয়ে কাটানোর প্রস্তুতি নেই যা আমাদেকে আল্লাহ তায়ালার প্রিয় কওে তুলবেআল্লাহ রাব্বুল আ'লামীন আমাদেরকে রমযান মাসের ফযীলত অর্জন করার তাওফীক দান করুনআমীন

No comments:

Post a Comment

Thanks

Contact Form

Name

Email *

Message *